April 2, 2025

সন্তান মাত্রই বাবা-মায়ের আদরের ধন। সেই সন্তান যদি একমাত্র হয় তাহলে তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই বাবা-মায়ের। আমাদের সমাজে এখনো ছেলেসন্তানদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই একমাত্র সন্তান সন্তান হলে তাকে তো মাটিতে কখনো রাকা যাবে না এমন ভাব। এর সুদূরপ্রসারী ফল খুব একটা ভালো হয় না। এতে সন্তান যেমন বিগড়ে যেতে পারে, তেমনি তার ভবিষ্যত্‍ জীবনেও ডেকে আনতে পারে সমস্যা।

মায়ের এই অতি আদর প্রভাব পড়ে সন্তানের দাম্পত্যজীবনেও। অনেক মেয়ে বিয়ে করতে চায় না মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তানকে। কিন্তু কী তার কারণ? কেন তারা মনে করে যে মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তানকে বিয়ে করা উচিত নয়? জেনে নিন কারণগুলো।

স্বামীর পরনির্ভরশীল এবং শিশুসুলভ হওয়া :

পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় ছেলে বড় হয় পরনির্ভরশীল হিসেবে। কারণ বড় বড় কাজগুলো তো বটেই, ছেলের ছোট-খাট কাজগুলোও মা করে দেন। ফলে ছেলের নিজের দেখভাল যেমন করতে পারে না, তেমনি অপরের দায়িত্বও নিতে পারে না। অথচ পুরুষদের হওয়া উচিত এমন যাতে তারা সহজেই স্ত্রী ও মায়ের দায়িত্ব নিতে পারে। এছাড়া মায়ের একমাত্র ছেলেরা তুলনামূলকভাবে শিশুসুলভ হয়। কারণ মা তাকে সারাক্ষণ ছোট বাচ্চার মতোই আগলে রাখেন। এর ফলে ছেলে মানসিকভাবে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ কম পায়। এই ছোট্ট কারণটা দাম্পত্যজীবনে ডেকে আনতে পারে বড় সমস্যা। শিশুসুলভ হওয়ার কারণে তারা ভবিষ্যত্‍ নিয়েও কম চিন্তাভাবনা করে থাকেন।

দাম্পত্যে নাক গলান ছেলের মা :

মায়ের একমাত্র পুত্র তার মায়ের কাছেই ছোটবেলা থেকে সব গোপন কথা শেয়ার করতে অভ্যস্ত থাকে। ফলে দেখা যায়, দাম্পত্যজীবনের অনেক কথাই তারা মাকে বলেন। এতে শাশুড়ি তার পুত্রবধূ সম্পর্কে এমন কথাই জেনে যান, যা হয়তো জানাটা উচিত নয়। অনেক মাকে দেখা যায় ছেলের দাম্পত্যজীবন নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাতে, যা শোভনীয় নয়।

যেমন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলে কেন, ঘুম থেকে উঠে গোসল করেছ কিনা, তোমাদের শারীরিক সম্পর্কে সমস্যা আছে কিনা, বাচ্চা কেন নিচ্ছ না ইত্যাদি প্রশ্ন করা। এতে যেমন দাম্পত্যের গোপনীয়তা বজায় থাকে না, তেমনি পুত্রবধুর ওপরে এক প্রকার মানসিক নির্যাতনও করা হয়। এসব কারণে অনেক মেয়ে মায়ের একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না।

সংসার নিয়ে শাশুড়ির ঈর্ষাকাতর হওয়া :

এ সমস্যাটি আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই দেখতে পাওয়া যায়, ছেলে যদি একমাত্র সন্তান না হয় তবুও। তবে তুলনামূলকভাবে একমাত্র ছেলের বউকে এ সমস্যাটা ভুগতে হয় বেশি। কারণ শাশুড়ি তাঁর সংসারে সর্বেসর্বা থাকেন, তার অধীনেই চলে সংসারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। তাই পুত্রবধু যখন তার পরিবারে আসে, তখন থেকে তার মনে বদ্ধমূল ধারণা যে পুত্রবধূ আসলে প্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও এ ধারণা অমূলক।

এছাড়া তিনি এটাও ধারণা করে বসেন যে ছেলে হাতছাড়া হয়ে গেল বা ছেলে পর হয়ে গেল! অথচ এ ধারণাটিও ভিত্তিহীন। এসব ভুল ধারণার ফলে তিনি ছেলে ও ছেলের বউয়ের সংসার নিয়ে ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন। এই ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আশঙ্কাতেও অনেক মেয়ে মায়ের একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না।

মা অন্যায় করলেও তা বলতে না পারা :

মা মাত্রই সম্মানিত ব্যক্তি এটা ধ্রুব সত্য। কিন্তু এই সম্মান অনেক সময় ভীতিরূপে ছেলের মনে অবস্থান করে। ফলে মা অন্যায় করলেও ছেলের তা বলতে বাধে। বিশেষ করে একমাত্র ছেলেরা মায়ের অন্ধ ভক্ত হয়। তাই মায়ের ন্যায়-অন্যায়ের বিচারের ক্ষমতা তাদের থাকে না !

এ সমস্যাটা তখনই প্রকট হয়ে দাঁড়ায় যখন ঘরে পুত্রবধু আসে। মা স্ত্রীর সাথে অন্যায় আচরণ করলেও ছেলে তা অদেখা করে দেয়। অনেক সময় দেখা যায় মা অন্যায় করলেও ছেলেকে মায়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে বা স্ত্রীকে শাস্তি দিতে। এতে যেমন স্ত্রীর অধিকার খর্ব হয়, তেমনি সংসারে আসে অশান্তি।

নিজের ব্যক্তিগত জীবন না থাকা :

মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তানকে বিয়ে করা মানেই ব্যক্তিগত জীবন অনেকাংশে ভুলে যাওয়া। যেহেতু এসব পরিবারে শাশুড়ির কর্তৃত্ব থাকে তাই প্রয়োজন পড়লেও তার অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। এমনকি শাশুড়ি ইচ্ছানুযায়ী পোশাক পরা, খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা ইত্যাদিও করতে হয় অনেক পরিবারে। ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। বিশেষ করে যেসব মেয়েরা নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তারা এড়িয়ে চলেন এক পুত্রসন্তান বিশিষ্ট পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *